নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হবে। এর ফলে নীতি সুদহার এখন ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার খরচ বাড়বে।

রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে মূল্যস্ফীতিতে টান পড়বে।

সিদ্ধান্তগুলো হলো:
১) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পলিসি রেট তথা ওভারনাইট রেপো সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ হবে।

২) নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৯.৭৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা।

৩) নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৫.২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৫ দশিমিক ৭৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হবে।

৪) ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সকল খাতে স্মার্ট (বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) এর সাথে প্রযোজ্য বিদ্যমান মার্জিন ২৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করা।

৫) বিনিময় হারকে বাজারমুখী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান প্রচেষ্টা জোরদারকরণ এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখা হবে।

এ সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর হবে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত সংকোচনমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হবে।

পুনর্গঠিত মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নীতি সুদহার করিডোর পুনঃনির্ধারণ প্রসঙ্গে গত বুধবার (২২ নভেম্বর) পুনর্গঠিত মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান, অর্থনীতিবিদ ড. সাদিক আহমেদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ারম্যান অর্থনীতি বিভাগ অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।

সভায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং এর ভবিষ্যত গতি-প্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি, বিনিময় হার, তারল্য ও সুদহার পরিস্থিতি এবং নীতি সুদহারের গতিবিধি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ- নীতি সুদহার বৃদ্ধি, আমানত ও ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে তা বাজারমুখীকরণ, টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ প্রদান স্থগিতকরণ, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অবহিত করা হয়।

এছাড়া, রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বৃদ্ধির কার্যকর ব্যবস্থাকরণ, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে বাজারমুখীকরণ, আমদানি মূল্য যাচাইসহ বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে তদারকি বৃদ্ধিকরণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় মেটানোর ব্যবস্থাও কমিটির সদস্যদের অবহিত করা হয়।

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত নীতি পদক্ষেপ, বিশ্ব বাজারের পণ্য মূল্যে নিম্নমুখী গতিধারা, আসন্ন আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভবনা এবং শীতকালীন ফসল সরবরাহ বৃদ্ধির সূত্রে আগামী মাসগুলোতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে বলে সভায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।